শীতকালে রুপচর্চার ঘরোয়া টিপস।শীতাকেল ত্বকের সুরক্ষায় কার্যকরি ১৯ টি টিপস

শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ম্লান হয়ে যায় এবং লাবণ্যতা হারাতে পারে। তাই ঘরোয়া কিছু সহজ টিপস দিয়ে আমরা শীতকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পারি। এই পোস্টে আমি আপনাকে এমন কিছু প্রাকৃতিক টিপস জানাবো যা আপনার ত্বককে রাখবে নরম, কোমল, এবং স্বাস্থ্যকর।

রুপচর্চার-ঘরোয়া-টিপস

পোস্টসূচিপত্রঃ শীতকালে রুপচর্চার ঘরোয়া টিপস।শীতাকেল ত্বকের সুরক্ষায় কার্যকরি ১৯ টি টিপস

শীতে ত্বক কেন শুষ্ক হয়?

শীতকালে ঠান্ডা বাতাস এবং কম আর্দ্রতা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। এছাড়া ঘরের ভেতরের হিটারের তাপও ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। এই কারণেই শীতকালে আমাদের ত্বক অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।

শীতকালে ত্বকের সুরক্ষায় কার্যকরি নিয়ম ১৯টি

শীতকাল মানেই শুষ্কতা, ত্বকের মলিনতা, আর নানা ধরণের ত্বকের সমস্যার সাথে লড়াই। আমাদের শরীর শীতের ঠান্ডায় অতিরিক্ত তেল বা আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, আর তখনই দেখা দেয় শুষ্কতা, রুক্ষতা, এমনকি ফাটা বা চুলকানি। তাই শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে ঘরে বসে সহজেই শীতের ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই শীতকালে ত্বকের সুরক্ষায় ১০টি কার্যকরী নিয়ম যা সহজেই অনুসরণ করা যায়।

১. ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার

শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা এড়াতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার একদম বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কী ধরণের ময়েশ্চারাইজার আপনার জন্য উপযুক্ত? শীতে ত্বক থেকে আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে যায়, তাই গাঢ় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যা আপনার ত্বককে দীর্ঘক্ষণ সুরক্ষিত রাখবে।

নিয়ম:

গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না, কারণ তখন ত্বক একটু ভেজা থাকে, আর এতে ময়েশ্চারাইজার ভালোভাবে কাজ করে।

২. ঠান্ডা পানির বদলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার

গোসলের সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হয়তো শীতে সম্ভব না, কিন্তু অতিরিক্ত গরম পানিও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করে, যা শীতকালে আরো বেশি শুষ্কতা সৃষ্টি করে। তাই চেষ্টা করুন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করার।

নিয়ম:

ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখতে গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।

৩. মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করুন

শীতকালে ত্বক এমনিতেই শুষ্ক হয়ে যায়, তার ওপর যদি কঠিন বা ত্বক শুষে নেয় এমন ক্লিনজার ব্যবহার করেন, তাহলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে উঠবে। শীতে মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করুন যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত না করে পরিষ্কার করে।

নিয়ম:

দিনে দু’বার, সকালে এবং রাতে, মৃদু ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত।

৪. সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক

অনেকেই মনে করেন শীতকালে সূর্যের তীব্রতা কম থাকে, তাই সানস্ক্রিনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি শীতকালেও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। সানস্ক্রিন ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

নিয়ম:

বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে SPF ৩০ বা তার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান করা

শীতের সময় আমরা অনেকেই কম পানি পান করি, কারণ আমাদের তৃষ্ণা কম পায়। কিন্তু ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে পানি শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখে।

নিয়ম:

প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। শরীরের পর্যাপ্ত পানি থাকলে ত্বকও সুন্দর ও সতেজ থাকবে।

৬. ঘরের ভেতরে আর্দ্রতা বজায় রাখা

শীতকালে ঘরের হিটার বা অন্যান্য গরম করার যন্ত্র ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয়। এর ফলে ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যায়। এ কারণে ঘরের ভেতর আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিয়ম:

রাতে ঘুমানোর সময় বা দিনেও ঘরে হিউমিডিফায়ার চালু রাখতে পারেন, যা বাতাসে আর্দ্রতা বজায় রাখবে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাবে।

৭. ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক স্ক্রাব

শীতকালে ত্বকের মৃত কোষগুলো ঠিকমত দূর না হলে ত্বক শুষ্ক এবং ম্লান দেখায়। তাই সপ্তাহে এক বা দুইবার ত্বকে মৃদু স্ক্রাবিং করুন। ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক স্ক্রাব যেমন বেসন ও দই, বা চিনি ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিয়ম:

ত্বক ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করার আগে প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এটি ত্বক থেকে মরা কোষ দূর করবে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করবে।

৮. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ

রুপচর্চার-ঘরোয়া-টিপস

শীতকালে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু, কমলা, পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল এবং সুরক্ষিত রাখে।

নিয়ম:

প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। এটি আপনার ত্বককে শীতের শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে।

৯. পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার

শীতকালে ঠোঁট ফাটা, হাত-পা ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা। এর জন্য একটি সহজ সমাধান হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি আপনার ত্বককে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং শুষ্কতা দূর করবে।

নিয়ম:

ঠোঁট এবং হাত-পায়ে রাতে ঘুমানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমান, সকালে ত্বক নরম থাকবে।

১০. গভীর ত্বক পরিচর্যা

শীতকালে ত্বকের গভীরে পুষ্টি জোগাতে পারে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করতে হবে। যেমন, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি প্রাকৃতিক তেলগুলো ত্বকের গভীরে গিয়ে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে।

নিয়ম:

রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে এই তেলগুলোর ম্যাসাজ করুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।

১১. শীতে ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার

মধু ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করে তোলে। প্রতিদিন গোসলের আগে মধু ত্বকে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে এবং শীতের শুষ্কতা দূর হবে।

কেন এটি কাজ করে: মধুতে আছে প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট, যা ত্বকের মধ্যে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক লাবণ্য ফিরিয়ে আনে।

১২. দুধ ও হলুদের ফেসপ্যাক

দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে। অন্যদিকে, হলুদে আছে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণাবলী যা ত্বকের ইনফেকশন দূর করে।

পদ্ধতি: 

এক চামচ হলুদের সাথে দুই চামচ দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ফলাফল: এই প্যাকটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে, পাশাপাশি শীতকালে ত্বকের শুষ্কতাও দূর করে।

১৩. অলিভ অয়েল ও শসার মিশ্রণ

অলিভ অয়েল ত্বকের গভীরে পুষ্টি দেয় এবং ত্বককে নরম রাখে। অন্যদিকে, শসা ত্বকের সজীবতা বাড়ায় ও শীতের শুষ্কতা থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

পদ্ধতি: 

এক চামচ অলিভ অয়েল ও শসার রস মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে সতেজ এবং ময়েশ্চারাইজড রাখবে।

১৪. বেসন ও দইয়ের ফেসপ্যাক

বেসন এবং দই মিলে ত্বককে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেয়। বেসন ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে এবং দই ত্বককে মসৃণ ও আর্দ্র রাখে।

পদ্ধতি:

দুই চামচ বেসনের সাথে এক চামচ দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ফলাফল: এই প্যাকটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং শীতের শুষ্কতা কমায়।

১৫. নারকেল তেলের ম্যাসাজ

শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে নারকেল তেল অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বককে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। নারকেল তেল রাতে ঘুমানোর আগে মুখে ও হাতে-পায়ে ম্যাসাজ করুন। এটি আপনার ত্বককে নরম রাখবে এবং শীতের শুষ্কতা কমাবে।

১৬. শীতকালে পর্যাপ্ত পানি পান করা

শীতে পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অবহেলা করে থাকেন, কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকলে বেশি করে পানি পান করা উচিত, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখবে এবং শুষ্কতা দূর করবে।

১৭. গ্লিসারিন ও গোলাপ জল

শীতে ত্বকের শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের মিশ্রণ একটি চমৎকার সমাধান। গ্লিসারিন ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং গোলাপ জল ত্বককে সতেজ করে।

পদ্ধতি:

গ্লিসারিন ও গোলাপ জল মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে মুখে লাগান। সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক সারাদিন ময়েশ্চারাইজড থাকবে।

১৮. অ্যাভোকাডো মাস্ক

অ্যাভোকাডোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শীতের শুষ্কতা দূর করে।

পদ্ধতি:

একটি অ্যাভোকাডো মিহি করে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে গভীরভাবে পুষ্টি জোগাবে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করবে।

১৯. শীতকালে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

শুধু বাহ্যিক যত্নই নয়, শীতকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, কমলা, পেঁপে এবং শাকসবজি রাখুন। এছাড়া শীতকালে বাদাম, আখরোট এবং অলিভ অয়েল জাতীয় খাবারও ত্বকের জন্য ভালো।

শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে শীতের রুক্ষতা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই ঘরোয়া এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও কোমল। আপনার ত্বককে ভালোবাসুন এবং শীতকালকে উপভোগ করুন!

রুপচর্চার-ঘরোয়া-টিপস

উপসংহার

শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক বাতাস ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। উপরের ২০টি কার্যকরী টিপস ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে শীতে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিতভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেওয়া।

ঘরোয়া টিপসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, এবং শীতে যথাযথ পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে ত্বককে শুষ্কতা ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তাই প্রতিদিনের রুটিনে এই টিপসগুলো অনুসরণ করে শীতেও ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা ধরে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Morning Li8 এ আপনার মূল্যবান কমেন্ট করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা প্রত্যেকটি কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।

comment url