কিভাবে মুখের ব্রণ দূর করব? তৈলাক্ত ত্বকে দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়।
ব্রণ এমন একটি সমস্যা যা বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের মানুষের জন্য খুবই বিব্রতকর কর। অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা জমে ত্বকের রোমকুপ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। অনেকেই ব্রণের সমস্যায় ভোগেন এবং দ্রুত সমাধান চান। আজকের এই পোস্ট তাদের জন্য যারা ব্রণের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন।
আজকের এই পোস্টে আপনাদের বলবো, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সঠিক যত্ন এবং কিছু কার্যকরী উপায় মেনে চললে ব্রণ কমবে সেইসব বিষয়বস্তু। এই পোস্টে আপনারা জানবেন কিভাবে সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরোয়া উপায়ে তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করতে পারবেন, এবং কিভাবে ত্বককে আর সুস্থ উজ্জ্বল রাখতে পারেন।পোস্টসূচিপত্রঃকিভাবে মুখের ব্রণ দূর করব? তৈলাক্ত ত্বকে দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়।
ব্রণ কেন হয়, মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ
ব্রণ হলো আমাদের ত্বকের এমন এক ধরনের সমস্যা, যা রোমকূপের ভিতরে অতিরিক্ত তেল, মৃতকোষ, এবং ব্যাকটেরিয়া জমাট ফলে আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। ব্রণের এই সমস্যাটি, তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। আমাদের ত্বকে শিবাম নামে এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন হয়, যা আমাদের ত্বককে ময়েশ্চারাইজ রাখে।
তৈলাক্ত ত্বকে মানুষদের ত্বকে এই প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন বেশি হয়, তখন তা রমকূপ বন্ধ করে ফেলে, এর ফলে ব্রণ তৈরি হয়।এছাড়াও আমাদের ত্বকে হরমোনের পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপে ও ব্রণ তৈরি হয়।
ব্রণ কত প্রকার বা ব্রণের প্রকারভেদ
ব্রণ সাধারণত ছয়টি প্রধান ধরনের হয়ে থাকে, প্রতিটি প্রকার ব্রণ ভিন্ন কারণে আমাদের ত্বকে সৃষ্টি হয়। নিচে ছয়টি প্রধান ব্রণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. ব্ল্যাকহেডস (Blackheads): ব্ল্যাক হেডস হচ্ছে আমাদের ত্বকে খোলা পোরে জমে থাকা তেল ও ময়লা যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে কালো হয়ে যায়। এটি ব্রনের এক ধরনের প্রকার যা সাধারণত আমাদের নাক ও কপালে বেশি দেখা যায়।
২. হোয়াইটহেডস (Whiteheads): হোয়াইট হেডস এমন ব্রণ যা আমাদের ত্বকের নিচে বন্ধ হয়ে থাকা পোরের বা ছিদ্রের মধ্যে তেল ও ময়লা আটকে যায়। আমাদের ত্বকের ছোট সাদা ফুসকুড়ির মত দেখা যায়। এ ব্রনটি সাধারণত ত্বকে ব্যথা দেয়না।
৩.প্যাপিউলস (Papules): প্যাপিউলস হলো লাল, ছোট ব্রণ যা আমাদের ত্বকে পুস ছাড়াই তৈরি হয়ে থাকে। এই ব্রনটি ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
৪. পাসচুলস (Pustules): পাসচুলস হলো ব্রণের এমন প্রকার যা প্যাপিউলস ব্রণের মতই, তবে এর মধ্যে পুস জমে থাকে। এই ব্রনটির মাথায় সাধারণত সাদা বা হলুদ ফুসকুড়ি তৈরি হয় এবং চাপ দিলে পুস বের হয়।
৫. সিস্টিক ব্রণ (Cystic Acne): সিস্টিক ব্রন হলো গুরুতর ধরনের ব্রণ। যেখানে বড় বা ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়ি হয়। এটি আমাদের ত্বকের গভীরের সংক্রমণ থেকে আসে এবং সঠিক চিকিৎসা ছাড়া দূর হয় না।
৬. নডিউলস (Nodules): নডিউলস হলো কঠিন, ব্যথাযুক্ত ব্রণ যা আমাদের ত্বকের গভীরে তৈরি হয়। এটি সিস্টিক ব্রণের মত গুরুতর। এবং এই ব্রনটিও সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ দ্বারা কমান প্রয়োজন।
ব্রণ হলে কি করবেন এবং কি করবেন না
ব্রণ হলে আপনাকে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত আপনার ত্বককে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত তেল সরিয়ে ফেলতে হবে। হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করে আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখা উচিত। ত্বক মুছতে রক্ষক তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। আপনার ত্বককে সব সময় হাইড্রেট রাখবেন।
আপনার ত্বকে ব্রণ বের হলে, ব্রণ খোচানো বা চেপে ফেলবেন না, এতে করে আপনার ত্বকের দাগ হতে পারে, এবংব্রণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারন। আপনাকে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে এবং ত্বক বন্ধ না করে এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
ব্রণ হলে কি করতে হবেঃ
- ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখবেন।
- সব সময় হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করবে।
- আপনার ত্বককে হাইট্রেড রাখবে।
- আপনার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
ব্রণ হলে কি করা যাবে নাঃ
- আপনার ত্বকে ব্রণ বের হলে,ব্রণ পচানো বা চেপে ফেলান না।
- ত্বকে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
- ময়লা হাতে মুখ স্পর্শ করবেন না।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না।
ব্রণ কমানোর খাদ্যাভ্যাস, দ্রুত ব্রণ দূর করার খাদ্য তালিকা
ব্রণ দূর করার জন্য শুধু ব্যবহারিক যত্নই নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এবং আমাদের ত্বকে ব্রণ দূর করার কার্যকর ভূমিকা পালন করে।আপনি যদি আপনার ত্বকে ব্রণ দূর করতে চান, তাহলে ব্রণ দূর করার জন্য শুধু ত্বকের যত্ন যথেষ্ট নয়, আপনার সঠিক অত্যন্ত খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাকে তৈলাক্ত খাবার, চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এর পরিবর্তে বেশি করে পানি পান করবেন। শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়াও, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ গ্রহণ করবেন, এ সকল খাদ্য আপনার ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।
এই অংশে আপনাদের বলব দ্রুত ব্রণ দূর করার উপযুক্ত খাদ্য তালিকা এবং কিছু সহজ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে।
দ্রুত ব্রণ দূর করার জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকা ঃ
১. সবুজ শাকসবজি ঃ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ শাকসবজি আমাদের ত্বকের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে, যা আমাদের ত্বকে ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
২. ফলমূল ঃ আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখতে ফলমূল খাওয়া অত্যন্ত জরুরী, বিশেষ করে লেবু, কমলা, বেরি জাতীয় ফল আমাদের ত্বক থেকে টক্সেন দূর করে এবং ব্রণ নিয়ন্ত্রণ পরে।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ঃ মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও বাদাম খাবার ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার। যা আমাদের ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ব্রণ সৃষ্টি প্রতিরোধ করে।
৪. পানী ও প্রাকৃতিক পানীয় ঃ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, যা ত্বকের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
৫. প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারঃ দই, কফি ইত্যাদি খাবারের প্রোবায়োটিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ভালো এবং আমাদের ত্বকে ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনার শরীরে সঠিক পুষ্টি পৌঁছাবে, ত্বকের তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
তৈলাক্ত ত্বকে স্কিন কেয়ার রুটিন, দ্রুত ব্রণ দূর জন্য স্কিন কেয়ার
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে আপনাকে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধানে সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিনে রুটিনে মৃদু ফেসওয়াশ দিয়ে আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করবে। আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে টোনার ব্যবহার করবেন। এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযোগী লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার লাগাবে।
এছাড়া সানস্ক্রিন সপ্তাহে একবার এক্সফলিয়েত কড়িয়া নিবেন, এবং প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার ফ্রিজে রাখা বরফ আপনার ত্বকে কিছুক্ষণ মাসাজ করবেন, এর ফলে আপনার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে। এ সবগুলোর মাধ্যমে আপনার তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যার দূর করতে পারবে।
ব্রণ কমানোর ক্রিম, দ্রুত ব্রণ দূর করার ঔষধ
তৈলাক্ত ত্বকের দ্রুত ব্রণ কমানোর জন্য বাজারে অনেক ধরনের ঔষধ ও ক্রিম পাওয়া যায়। তবে, আপনাকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ঔষধ ও ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। তৈলাক্ত ত্বকে দ্রুত ব্রণ দূর করার কিছু সাধারণ ঔষধ ও ক্রিম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো, আশা করি আপনার কাজে আসবে।
- বেঞ্জেয়েল পারক্সাইড (Benzoyl Peroxide) : এটি আপনার তৈলাক্ত ত্বকের দ্রুত ব্রণ দূর করবে। এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে আপনার ত্বকর মৃদু কোষ পরিষ্কার করেবে।
- স্যালিসিলিক এসিড (Salicylic Acid): এটি আপনার ত্বকের পোরস পরিষ্কার করবে এবং আপনার ত্বকে থাকা অতিরিক্ত তেল নেমন্তন করতে সাহায্য করবে।
- রেটিনয়েডস (Retnoids): এটি আপনার ত্বকের কোষ পুনর্জীবিত পূর্বে এবং আপনার ত্বককে পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করবে
- এন্টিবায়োটিক ক্রিম (Antibiotic Creams): এটি আপনার তৈলাক্ত ত্বকে সংক্রমণ জড়িত ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।
উপরে দেখানো ঔষধ গুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন, কারণ সব ত্বকের জন্য সব প্রোডাক্ট উপযোগী নয়।
ব্রণের চিকিৎসা, ব্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শনে
ব্রণের সঠিক চিকিৎসা পেতে স্কিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। অনেকেই বাড়িতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বা ড্রাগস ব্যবহার করে ব্রণ কমানোর চেষ্টা করে, এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল এবং ত্বকের ক্ষতি এড়াতে একজন ভালো স্কিন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।ডাক্তারের পরামর্শে সাধারণত যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, চলো তা সম্পর্কে নিচে আপনাদের সাথে আলোচনা করি।
- অ্যান্টিবায়োটিক ঃ ব্রণের সংক্রামন কমাতে, ডাক্তারের স্ক্রিন দেখে মুখে ব্যবহারের অ্যান্টিবায়োটিক বা ঔষধ দিয়ে থাকে।
- হরমোনাল থেরাপি ঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনাল সমস্যা থেকে ব্রণ হয়ে থাকে, তখন ডাক্তার নির্দিষ্ট হরমোন হরমোনাল থেরাপি বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- রেটিনয়েড থেরাপি ঃ ত্বকের গভীর স্তরের রং দূর করতে রেটিনয়েড ব্যবহার করা হয়, এটি সাধারণত ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া ব্যবহার করা যায় না।
- স্কিন কেয়ার রুটিন ঃ ডাক্তারেরা ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে বলে।
উপসংহার
ব্রণ একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যয়া, বিশেষত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের দ্রুত ব্রণ দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতি, সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন এবং ডাক্তারের পরামর্শের সমন্বয়ে সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান আপনি পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার ত্বকের যত্নে ধৈর্য রাখা এবং নিজের ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা
লেখক এর শেষ কথা
আপনার তৈলাক্ত ত্বকের দ্রুত ব্রণ দূর করার জন্য ধৈর্য ও সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। অতিরিক্ত তেল ও ময়লা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ তোরে ব্রণের সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখবেন এবং সঠিক ত্বকের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
কোন পণ্য ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী পণ্যটি উপযুক্ত কিনা তা ভালো করে যাচাই করে নিবেন। ত্বক অনেক সেনসিটিভ একটি জিনিস তাই, আপনার ত্বকে নিজে থেকে চিকিৎসা না করে সঠিক ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।
আজ এ পর্যন্তই, আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের কোন উপকারে আসে, তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি করে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।
Morning Li8 এ আপনার মূল্যবান কমেন্ট করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা প্রত্যেকটি কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।
comment url